প্রতিটি কাজেই কিছু সুবিধা অসুবিধা থাকে। আর সেটাই স্বাভাবিক। বাংলাদেশে ই-কমার্স করার জন্য যেমন কিছু সুবিধাজনক দিক রয়েছে। তেমনি রয়েছে কিছু সমস্যাও। দিন শেষে সফল সেই হবে যে সুবিধাগুলোকে কাজে লাগাতে পারবে আর অসুবিধাগুলোকে জয় করতে পারবে। কিন্তু সুবিধাকে কাজে লাগানো কিংবা অসুবিধাগুলোকে জয় করার জন্য আগেতো সেগুলো জানা থাকা চাই।
সুবিধাসমূহ
১। বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ। এখানে প্রতি বর্গকিলোমিটারে জনসংখ্যার যে ঘনত্ব। তাতে ই-কমার্সের সবচেয়ে উপযোগী ক্ষেত্রে। কারণ প্রতিটি অপারেটিং এরিয়া বা জোনে যে পরিমাণ অর্ডার আসার সম্ভবনা আছে তাতে লাভ তোলার কাজটা সহজ হয়ে যাওয়ার কথা কারণ অপারেশন এবং ডেলিভারী খরচ কমে যায়।
২। বর্তমানে দেশের অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। স্মার্টফোনের ব্যবহার, ইন্টারনেটের দাম আর বিদ্যুতের গ্রাহক এগুলো খুব দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
৩। এক কেন্দ্রীক নগরায়ন, অপরিকল্পিত শপিং সেন্টার হওয়ার কারণে খোদ ঢাকা শহরেই সবকিছু পাওয়া গেলেও সবকিছু সর্বত্র পাওয়া যায় না। তাই অনলাইন শপ ক্রেতাদের জন্য এটা একটি সুবিধা।
৫। যদিও ই-কমার্স একটি বিশাল বিজনেস কনসেপ্ট। তবুও ফেসবুক ব্যবহার করে এটাকে অন্তত শুরু করে দেয়া যায়। এমনকি মার্কেটপ্লেস কনসেপ্টে ওয়ারহাউস না করেও পন্য বিক্রি করা যায়।
কাস্টমার ডেটাবেজ, অনলাইন নিয়ন্ত্রন, সরাসরি শপিং সেন্টারে যাওয়ার ঝামেলা থেকে মুক্ত হওয়া এরকম কিছু সাধারণ বা কমন সুবিধাতো রয়েছে। সেগুলো আমরা এই লেখায় আলোচনা না করে অন্য লেখায় করব। কারণ এখানে আমরা শুধু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সুবিধা অসুবিধা নিয়ে আলোচনা করছি।
অসুবিধা সমূহ
শুধু সুবিধা আর সম্ভাবনাই কোনো ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার চূড়ান্ত কথা নয়। আসল কথা হলো, সুবিধা ও অসুবিধা এই দুয়ের বিশ্লেষণ। এবার আমরা অসুবিধা নিয়ে আলোচনা করব?
১। যদি সঠিকভাবে ই-কমার্স করতে হয়ে। তাহলে বিশাল একটা বিনিয়োগ চলে যায় অনলাইন প্লাটফর্ম দাড় করাতে। এছাড়া ব্যবসাকে লাভজনক করতে সময় নিয়ে অপেক্ষা করতে হয়।
২। দেশে অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলেও সাপ্লাই চেইন ও বাজার ব্যবস্থা বেশ অগোছালো। শক্তিশালী শিপিং লাইন বা ডেলিভারী চেইনও গড়ে উঠেনি। ফলে প্রোডাক্টস সোর্সিং এবং হোম ডেলিভারী দু’খাতেই সমস্যা রয়েছে।
৩। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা প্রযুক্তি ও ব্যবসায় বান্ধব এমনকি কর্মমূখী না হওয়ার কারণে ই-কমার্স পরিচালনার জন্য দক্ষ লোকের অভাব রয়েছে।
৪। পর্দার আড়ালে ক্রেতা ও ভোক্তা থাকেন বিধায়। এখানে প্রতারণার সুযোগ তৈরী হয়। যদিও সেটা খুব সাময়িক। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এধরনের প্রতারণা চললে ব্যবসা খাত হিসেবে ই-কমার্সের জন্য চ্যালেঞ্জ থেকেই যায়।
৫। ই-কমার্স একটি মাল্টিফাংশনাল বিজনেস। এখানে পন্য সংগ্রহ, ডেলিভারী, প্যাকেজিং, ওয়েবসাইট পরিচালনা, সামাজিক যোগাগোগ মাধ্যম ব্যবস্থাপনা, ডিজিটাল মার্কেটিং প্রভূত বিষয়ে জ্ঞান থাকা দরকার। মাল্টি ট্যালেন্টেড টিম দিয়ে পরিচালনার প্রয়োজন হয়।
৬। সময়মতো সঠিক পন্য ভোক্তার কাছে পৌঁছে দেয়া একটা চ্যালেঞ্জ। নানাবিধ কারণে এই চ্যালেঞ্জে অনেকে জয়ী হতে পারে না। তবে পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি হচ্ছে। যারা এই চ্যালেঞ্জ নিতে পারে তাদের জন্য ভবিষ্যত খুব ভালো।
তরুন উদ্যোক্তাগণ আশাকরি সুবিধা অসুবিধা দুটোই মাথায় রেখে তাদের বিজনেস পরিকল্পনা সাজাতে পারবে। সুত্র : ইক্যাব – লেখা- জাহাঙ্গীর আলম শোভন