লোগো ডিজাইনের বিভিন্ন দিক

লোগো ডিজাইন প্রতিষ্ঠানের একটা গুরুত্বপূর্ন বিষয়। লোগো কখনো ট্রেড মার্ক করা থাকে। এটা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মার্কা বা প্রতীকের মতো। আধুনিক যুগে লোগো বা মনোগ্রাম হলো আঙুলের ছাপ কিংবা সিগনেচারের মতো। কোন প্রতিষ্ঠানের লোগো কেমন হবে? এটা তাদের নিজস্ব ব্যাপার। আবার প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের লোগো আলাদা। এক প্রতিষ্ঠানের লোগোর সাথে অন্য প্রতিষ্ঠানের লোগো মিলে যাওয়া ঠিক নয়। বলতে পারেন মিলতে পারবেনা। এতে সে প্রতিষ্ঠান আপনার বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে। তাতে বড়ো অংকের জরিমানাও গুনতে হতে পারে। তাই ভালো প্রতিষ্ঠানের লোগো ডিজাইন গুরুত্বসহকারে করা উচিত। প্রথম দেখায় লোগোর কোয়ালিটি দেখে লোকেরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মান ও রুচি সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা পেতে চেষ্টা করে। তাই আসুন লোগো সম্পর্কে আমরা আরো কিছু জেনে নিই।
লোগো কি কি প্রকার হতে পারে।

লোগো বিভিন্ন রকম হতে পারে। শুধু নামটাই লোগো হতে পারে। সেক্ষেত্রে কোনো বাজারী ফন্ট ব্যবহার না করে নামটা আর্ট করা হলে ভালো। পুরো নামটার ক্ষেত্রে অন্তত একটি বর্ণ অন্যরকম করে দেয়া যেতে পারে। যেমন পত্রিকার লোগো। বড়ো কোম্পানীর লোগোগুলো এমন হয়। এ ক্ষেত্রে এক কালার হতে পারে যেমন বাটা, কোকাকোলা। আবার মাল্টিকালার হতে পারে যেমন গুগল ইয়াহু।

আবার লেখার পাশে বা উপরে বিশেষ সাইন থাকতে পারে। যা কোম্পানীর কোনো বিশেষ পন্য বা ব্যবসার ধরনকে ইঙ্গিত করে। যেমন ইউনিলিভার, নেসলে ইত্যাদি।

এরকমও লোগো হতে পারে যে লোগো শুধু একটি সাইন বিশেষ করে গাড়ী কোম্পানীর লোগো গুলো এরকম হয়ে থাকে। আবার মাঝখানের একটি বর্ণকে সাইন বানিয়ে বা সাইনের সাথে মিলিয়ে লোগো হতে পারে। যেমন পাঠাও।

লোগো কেমন হওয়া উচিৎ

১। লোগো ছোট সহজ দৃস্টিনন্দন সৃজনশীল ও শিল্পমান সম্পন্ন হওয়া উচিত। সেজন্য পেশাদার লোগো ডিজাইনাদের দিয়ে লোগো ডিজাইন করা উচিত।

২। যদি নিজে লোগো বানান তাহলে ডিজাইনারদের পরামর্শ নিয়ে তৈরী করা উচিত। ডিজাইনার নিজের পরিচিত হলে বা পেশাদার ডিজাইনার না হলে তাহলে তাকে আগেই লিখিত ইন্সটাকশান মানে কি কি বৈশিস্ট্য থাকবে তা বুঝিয়ে দেয়া উচিত।

৩। লোগো এক কালারের হলে সেটা আদর্শ তবে । দুই কালার হতে পারে। লোগোতে ২ কালারের বেশী ব্যবহার করা ঠিক নয়। এতে কালার ম্যাচিং ও প্রিন্টিং কাজে জটিলতা বৃদ্ধি পায়। বড়ো বড়ো কোম্পানীগুলো এক কালার লোগো ব্যবহার করে থাকে।

৪। রং ঠিক করা খুব গুরুত্বপূর্ণ । ব্যবসার ধরণ বা পন্যের সাথে মিলিয়ে রং ঠিক করা ভালো। যে রংই হোক সেটা যেন আবার ২ রং এর বেশী মিশ্রণ না হয়। মনে রাখবেন। প্রেসে রং হলো চারটি: সিএমওয়াইকে CMYK, ছায়ান বা হালকা আকাশী, মেজেন্ডা বা গোলাপী, ইয়েলো বা হলুদ আর কালো বা ব্লাক। এই রংগুলোর মিশ্রনে অন্য রং তৈরী হয়। যেমন হলুদ এবং মেজেন্ডার মিশ্রণে তৈরী হয় লাল। ঠিক এই ফরম্যাটে ইলাস্ট্রেটর এর কালার ফরম্যাট সাজানো।

৫। লোগো কখনো ফটোশপে ডিজাইন করা উচিত নয়। কোনো ডিজাইনের যদি ফটোশপে লোগো ডিজাইন করে তাহলে হয়তো সে প্রিন্টিং প্রযুক্তি সম্পর্কে অজ্ঞ অথবা সে আপনাকে ঝামেলায় ফেলার জন্য একটা বুদ্ধি বের করেছে। কারণ ফটোশপের লোগোটি বড়ো করতে গেলে ঝামেলা হতে পারে।

৬। লোগো অবশ্যই ইলাস্ট্রেটরে ডিজাইন করে ফাইলটি ক্রিয়েট আউটলাইন করে ভেক্টর ফাইল আকারে সংরক্ষণ করতে হবে। ফটোশপ ফাইলের ঝামেলা হলো যখন আপনি লোগোটি বড়ো করে একটি বিলবোর্ড এর জন্য তৈরী করবেন তখন এটি ফেটে যেতে পারে। তাছাড়া যেহেতু প্রিন্টের আগে যেকোনো কাজ ইলাস্ট্রেটর ফরম্যাটে আউটপুট দিতে হয়। সেহেতু ফটো এডিটের কাজ না থাকলে ইলাস্ট্রেটরে ডিজাইন করাই ভালো।

৭। ডিজাইনের পর লোগোটির কয়েকটি ফরম্যাট সংরক্ষণ করবেন। যেমন .ai, .pdf, .eps, .png ইত্যাদি। পিএনজি করার সময় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যেন কোনো ব্যাকগ্রাউন্ড না থাকে। এমনকি সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডও না। ব্যাকগ্রাউন্ড থাকবে স্বচ্চ।

লোগো কি বাংলায় হবে না ইংরেজীতে হবে?

আরেকটি বিষয়ে কথা বলে শেষ করছি। লোগো কি বাংলায় হবে না ইংরেজীতে হবে। লোগো কোনো চিঠি নয় যে সবাই বুঝতে হবে। তাই লোগো বাংলা ইংরেজী সমস্যা নয়। তবুও আপনি যদি সবাইকে বোঝাতে চান তাহলে ইংরেজী ভালো। কারণ তা সবাই বোঝে। কিন্ত লোগোটা যদি বাংলা মিডিয়াম স্কুলের হয়। কিংবা বাংলা ভাষা সম্পর্কিত কোনো বিষয়ে হয়, বা দেশমাতৃকার কোনো ব্যাপার থাকে। তাহলে বাংলায় হতে পারে। যেমন বাংলা পত্রিকার নিশ্চই ইংরেজী লোগো হওয়া ঠিক নয়।

বাংলায় হোক ইংরেজী হোক লোগো হলে সিগনেচারের মতো। তাই লোগো দুইরকম হওয়া বাঞ্চনীয় নয়। আগেকার দিনে যাদের অক্ষর ভিত্তিক লোগো মা মাউথপিক বলে যেটাকে যেমন কোকাকোলো বা বাটা। এধরনের পন্যের নাম হলে সেটার দুই ভাষার ভার্সন থাকতে পারে। যেসব কোম্পানীর নামের নিচে ওয়েবসাইট আছে। তাদের লোগো যদি বাংলায় হয় তাহলে আবার ইংরেজী ফরম্যাট না হলেও চলে। আর যদি করতে হয়। তাহলে ইংরেজী লেখার আর্ট আর বাংলা লেখার আর্ট যেন একই রকম হয়। সেটা খেয়াল রাখতে হবে।

আশাকরি লোগো সম্পর্কে আপনারা একটা ধারণা পেয়েছেন। Red Koncept এর প্রিন্টিং এর কাজ করতে গিয়ে। ক্লায়েন্টদের লোগোর যন্ত্রনায় বিরক্ত হয়ে এই লেখাটা লিখলাম। আপনি যদি ডিজাইনার হন আর ক্লায়েন্ট যদি লোগো নিয়ে কনফিউশনে থাকে তাহলে তাকে এই লেখাটি শেয়ার করুন। অথবা আপনি যদি উদ্যোক্তা হোন আর আপনার ডিজাইনার যদি আনাড়ি হয়। তাকেও এই লেখাটি শেয়ার করুন। আর বলুন দয়া করে লোগো বানিয়ে উপকার করতে গিয়ে যেন ঝামেলায় পড়তে না হয়। যারা প্রিন্টিং এর কাজ করবে তারা যেন বার বার ফোন দিতে না হয়। আর প্রিন্টিং এরপর যেন কাজের কোয়ালিটি নিয়ে তাদের সাথে আপনাকে ঝগড়া করতে না হয়।

লোগো বানাতে খরচ কেমন: দেখুন যারা অনলাইনে কাজ করে ২ ডলারে লোগো বানানো হয় আবার ২ হাজার ডলারও পায় লোগোর জন্য সূতরাং। এটা মূল্য ঠিক করা যায়না। দেশে আন্তজাতিক মানের ডিজাইনারগণ ৫ থেকে ২০ হাজার টাকা নেন। তবে ডিজাইনারদের একটি লোগোর জন্য ২ হাজার টাকার কম দেয়া ঠিক নয়। তাহলে এটা অসম্মান হয়ে যায়।

বড়ো বড়ো তত্বকথা না বলে বাস্তবতা শেয়ার করলাম। আশা করি আপনাদের কাজে লাগবে।

Messenger icon
Send message via your Messenger App